যশোরে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত
মুহাম্মাদ সাজিদ
গতকাল (৪ তারিখ) বুধবার যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা ইমাম পরিষদ যশোরের আয়োজনে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মক্কা শরীফ থেকে আগত শায়েখ আব্দুর রউফ বিন আব্দুল হাফিজ মাক্কী, "সিনিয়র নায়েবে আমির, ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়াত মুভমেন্ট"। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মদীনা শরীফ থেকে আগত ড. মাওলানা আহমাদ আলী সিরাজ, "কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী, ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়াত মুভমেন্ট"। মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনে খতমে নবুওয়াতকে অস্বীকারকারী কাদীয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার জোর দাবী জানানো হয়।
বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়াত মুভমেন্ট-এর বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মুফতি শুয়াইব ইবরাহীম এবং বাংলাদেশের প্রখ্যাত দাঈ মুফতি আব্দুল মাজিদ, ঢাকা।
মহাসমাবেশে মক্কা ও মদীনা শরীফের মেহমানগণ বলেন, "কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আমাদের সমাজের অনেক মুসলমান মনে করেন, 'তারাও মনে হয় ইসলামেরই একটি দল। অথচ কাদিয়ানীদের সাথে মুসলমানদের বিরোধিতা কোনো শাখাগত বিরোধিতা নয়। এটি সরাসরি ইসলাম এবং কুফরের বিরোধ। কাদীয়ানী সম্প্রদায় আমাদের নবীজী হযরত মুহাম্মদ (স:) কে বিশ্বাস করে না তাই তারা অমুসলিম- কাফের। তারা সরলমনা মুসলমানদেরকে প্রতারণামূলকভাবে ইসলামের নাম ও পরিভাষাসমূহ ব্যবহার করে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের উপাসনালয়গুলোকে মসজিদ বলে প্রচার করছে। সাথে সাথে তারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় সভা-সমাবেশকে ইসলামিক জলসা বলে প্রচার করে থাকে। সুতরাং আমাদেরকে খুব ভালো করে স্মরণ রাখতে হবে, আহমদী মুসলিম নামধারী কাদীয়ানীরা কাফের ও বেঈমান। তাদের উপাসনালয় মসজিদ নয়, তাদের পিছনে নামায পড়া জায়েয নেই। তাদের জলসায় শরীক হওয়া, তাদের তাফসীর শোনা, তাদের বই পড়া ও বিশ্বাস করা মুসলমানদের জন্য হারাম। তাদের কাছে মেয়ে বিবাহ দেওয়া, তাদের মেয়েদেরকে বিবাহ করা, তাদের জানাযা পড়া, মুসলমানদের কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা না জায়েয। সারা বিশ্বের সকল মতপথের মাযহাবের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত, কাদিয়ানীরা কাফের, কাদিয়ানীদের যারা কাফের মনে করবে না তারাও কাফের।"
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ১৪৪ টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিগণ মক্কাতে সমবেত হন। তারা কাদীয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার
ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। সৌদী সরকার কাদীয়ানীদের কাফের ঘোষণা করে সেদেশে তাদের প্রবেশ চিরতরে নিষিদ্ধ করে দেয়। ইরান ও পাকিস্তান সরকারও তাদেরকে কাফের ঘোষণা করে। ১৯৮৮ সালে ইরাকে সকল মুসলিম দেশের ধর্মমন্ত্রীগণ কাদীয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার লিখিত প্রতিশ্রুতী দেন। অনেক দেশ সে প্রতিশ্রুতী পালন করলেও বাংলাদেশের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ সে প্রতিশ্রুতী পূরণে আজও ব্যর্থ রয়ে গেছে। সুতরাং আমাদের দেশে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদীয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলনের প্রস্তাবনাসমূহ:
১. বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদীয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
২. ভারতসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষণে ক্ষণে উসকানিমূলক ভাবে কুরআন মাজীদ ও বিশ্ব মানবতার মহান দূত প্রিয় রাসুল (সা.)-এর অবমাননা করা হচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম ও মহানবীর (সা.) কটুক্তকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন পাশ করতে হবে।
৩. বাংলাদেশে ইসকন কর্তৃক মুসল্লীদের ওপর হামলা, মসজিদ ভাঙচুর এবং মুসলিম আইনজীবি সাইফুল ইসলাম হত্যার তীব্র নিন্দা ও বিচার দাবি করছে আজকের এই সমাবেশ।
৪. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ভারত ও ইসরায়েলের মদদপুষ্ট ইসকনের সকল কার্যক্রম এদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলনে হাফেজ মাওলানা বেলায়েত হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা ইমাম পরিষদ যশোরের জেলা, থানা, শহর ও ইউনিয়ন শাখার নেতৃবৃন্দ।